nishat shahriyar nepal travel blog 2024

আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ | নেপালে ৭ দিন!

বিদেশ ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করলেই মানুষ যায় ভারতে। আমার ভাগ্য ভালো যে ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় শেষমেশ আমাদের অথল্যাব মার্কেটিং টিমের ইয়ারলি ট্রিপে নেপাল ভ্রমণটাই আমার জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ হয়ে গেলো।

যদিও নেপালে যাওয়া হয়েছে ২০২৪ সালে, ১ বছর আগে। কিন্তু এই ড্রাফট রেডি করে রাখার পরও আলসেমির কারণে নিশনামায় দেওয়া হয় নি। এর মাঝে আবার ২০২৫ এ ফিলিপাইন ঘুরে আসছি। সেটার ড্রাফটও রেডি করে রাখা শীঘ্রই নিশনামাতে লিখব। 

আমার এই প্রথম বিদেশ ভ্রমণ আমার জন্য এমনিতে স্মরণীয় হয়ে থাকার কথা, যেহেতু এটি আমার প্রথম কোন দেশে অফিশিয়ালি যাওয়া, এর সাথে প্রথম ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট এবং নেপালের মতও সুন্দর একটা দেশ ঘুরতে যাচ্ছি। 

কিন্তু নেপাল ভ্রমণটা স্মরণীয় হয়ে গেলো আমার বেকুবি, টান টান উত্তেজনা আর শেষ মুহুর্তে প্লেনে উঠা নিয়ে। সেইসব নিয়েই লিখছি আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ – নেপাল! 

যাত্রার শুরুতে যত গণ্ডগোল!

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪-০ দিন/রবিবার – সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা 

বাসা থেকে রাতে খেয়েদেয়ে সিলেট ষ্টেশন সিলেট থেকে রাত ১১.৩০ এর ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্য সবার যাত্রা শুরু। সকালে ৬টায় বিমানবন্দরের পাশে হোটেলে বসে নাস্তা শেষ করার পর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ধরা পড়ল। 

এয়ারপোর্টে ঢুকার আগে সবাই নিজেদের কাগজপত্র পাসপোর্ট চেক করছিলো। স্বাভাবিকভাবে আমিও আমার কাগজপত্র আর পাসপোর্ট ব্যাগ থেকে বের করতে গেলাম। তখনি বুঝলাম আই ফাকড আপ!

শিট! আমি আমার পাসপোর্টটাই ফেলে এসেছি! সাথে সাথে মাথায় হাত। কিভাবে এই ভুল করলাম বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সব কিছু চেক করে নিয়ে আসার পর মেইন জিনিসই ফালায় আসছি ম্যান। 

পুরাই নাম্ব লাগছিলো নিজেকে! আমার কলিগদের বলতেই তাদেরও মাথায় হাত। 

আমার কলিগ সবাই স্বান্তনা দিচ্ছিল একটা কিছু ব্যবস্থা হবে। মাত্র ৬ টা বাজে, ৯.৩০ এ বোর্ডিং। হঠাৎ কলিগ আপু সাজেশন দিল যে সিলেট থেকে কি কেউ নিয়ে আসতে পারবে সকালে ডমেস্টিক ফ্লাইটে? দেখেন তো সিলেট থেকে সকালের ফ্লাইট কয়টায় ছাড়ে?!

সাথে সাথে বাসায় ফোন দিলাম। 

আমার ওয়াইফকে সাথে সাথে ঘুম থেকে তুলে পাসপোর্ট জায়গায় আছে কি না খোজ নিলাম। এখানে তো একটা ঝারি খেলাম।  ছোট ভাই ঘুমে ছিলো ফোন দিয়ে ঘুম থেকে উঠালাম। বললাম, তাড়াতাড়ি সিলেট টু ঢাকা ফ্লাইট টিকেট কিনতে আর তার ভাবির কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে একটা সিএনজি ভাড়া করে বিমান বন্দরে পৌঁছাইতে। সে ঘুম ভেঙ্গে পুরোপুরি ভেবেচেকা খেয়ে গেল। তার কাছ থেকেও একটা ঝাড়ি খেলাম।

সবাই বলল ঠান্ডা মাথায় চলেন আগে বিমানবন্দর যাই। সেখানে গিয়ে বাকি দেখা যাবে কি করা যায়। বিমানবন্দরে গিয়ে আরেক কলিগ ভাই প্রবেশপথে কথা বলল। তারা কাছের ডেস্কের এক মুরব্বীর সাথে কথা বলতে বলল। কারণ পাসপোর্ট ছাড়া ভেতরে ঢুকতে দিবে না। যদিও টিকেট ছিল। মুরব্বী কাদের সাথে ফোন দিয়ে যেন কথা বলে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে দিলেন। দুই কলিগ আর আমি বিমান কাউন্টারে কথা বললাম। ওইদিনের বাকি সব ফ্লাইট ফুল। আর গেলেও ২৬ হাজার পড়বে! মাথা নষ্ট নাকি! পরের দিনও খরচ পড়বে অনেক! 

এদিকে কলিগরা অনলাইনে দেখতেছিলো ডমেস্টিক ফ্লাইটের টিকেট আছে কি না। ছোট ভাই ঘুম থেকে উঠেই পিসিতে বসছে টিকেট কাটার জন্য। সময় সকাল ৭টা। এদিকে আরেক কলিগ জানাল ফ্লাইট এক্সপার্টে টিকেট দাম চার হাজার সামথিং জানাচ্ছে। ছোট ভাইকে জানাতেই সে টিকেট কেটেই কাপড়চোপড় পরেই বিমানবন্দরের দিকে রওনা দিল। এদিকে আমার টেনশন হচ্ছিল ৮.২০ এর ফ্লাইট কখন এসে নামবে ঢাকা। ছোটভাই ওদিকে সিএনজি দিয়ে ওসমানী বিমানবন্দরে যাচ্ছে, যদি সে দেরি করে তাইলে শেষ। সে কোনভাবে ৮.২০ এ গিয়ে ফ্লাইটটা ধরতে পারলো।

এদিকে কলিগ ভাই কাউন্টারে কথা বলে আমার জন্য চেকইন টাইম ৩০ মিনিট এক্সটেন্ড করল। সবাই চেকইন করে ফেলতেছিলো আর বসে বসে অপেক্ষা করছি। এর মধ্যে আরেক কলিগ ভাই আপু আসল। তারা জানত না এই কাহিনি। যাই হোক বলার পর টেনশন না নিতে বলল প্ল্যান এসে নেমে যাবে ৯টার আগে। যদিও আমি ভেতরে ভেতরে টেনশনে ফেটে পড়ছিলাম। এর মাঝে গ্রুপ চ্যাটে আমার বস জানালেন ডমেস্টিক ফ্লাইট ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল দিয়ে আসবে না আমাকে ডমেস্টিক টার্মিনালে গিয়ে পাসপোর্ট আনতে হবে। যেহেতু আমার ছোট ভাই ইউএস বাংলাতে আসছে জুনিয়র কলিগ তার বন্ধু ইউএসবাংলার একজনকে ফোন দিয়ে আমাদের কথা বলে রাখল যে কোথাও আটকালে যেন তাকে ফোন দেই। এদিকে কলিগরা ফোন দিয়ে ভেতর থেকে খোজ নিচ্ছে।

তখন মজা নিতে আসলেন আমার বস। ভাই মজা নিলেও স্বান্তনা দিচ্ছিলো। এদিকে ছোট ভাই জানাল প্ল্যান টেইকফ করেছে সিলেট থেকে। 

আমি কৃতজ্ঞ আমার কলিগদের প্রতি। তারা পাশে থেকে আমাকে যেভাবে সান্ত্বনা দিয়েছে তা বলার ভাষা নাই। লাভ ইউ অল!

সবাই আস্তে আস্তে বোর্ডিং পাস নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। আমি একা একা টেনশন করছি। ৮.৪৫, ৮.৫০, ৮.৫৫, ৯টা বাজে। ডমেস্টিক ফ্লাইট তো আসে না। টেনশনে নিজেই দৌড় দিলাম ডমেস্টিক টার্মিনালে। ৯.১০, ৯.২০, ৯.২৫ বিমান নামলেও প্যাসেঞ্জাররা বাস দিয়ে আসতেছে ৩০ ছুই ছুই বাস থেকে ছোট ভাই এসে ঢুকতেই তার হাত থেকে পাসপোর্টটা নিয়েই দৌড় দিলাম নিচ তলা থেকে উপরের ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালে। 

কাউন্টারে গিয়ে দেখি আরেকজন আছে। কোন মত শ্বাস নিয়ে সবকিছু দিলাম। তাদের বলা থাকায় সাথে সাথে দিয়ে দিল লাগেজ ক্যারিওনে দিয়ে। দৌড় দিয়ে ভেতরে ঢুকলেও ফ্রেস পাসপোর্ট থাকায় নানান প্রশ্ন করল এজ ইউজুয়েল, সংক্ষেপে পুরো ব্যাপারটা বলতেই আটকালো না। পাসপোর্ট এ সিল দিয়ে আবার দৌড়। গিয়ে দেখলাম লম্বা লাইনে এখনো চেক অইন চলতেছে। সবকিছু চেকিং করে ভেতরে ঢুকে একদম শান্তি পাইলাম। আমাকে ভেতরে পেয়ে আমার কলিগরাও স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারল। পুরা জিনিসটা একটা সিনেমার ঘটনার মত ঘটছিলো। আমি ১০ মিনিট আগেও জানতাম না আমি নেপাল যেতে পারব কি না! প্ল্যানে উঠার পর টেইক অফের পর নিশ্চিত হলাম রে ভাই, আমি নেপাল যাচ্ছি।

নেপালের আকাশ নেপাল ভ্রমণ
নেপালের আকাশে

যাত্রা শুরু নেপালে

৩০ সেপ্টেম্বর – ১ম দিন/সোমবার – ঢাকা + নেপাল

কাঠমুন্ডু বিমানবন্দরে নেমে আমরা সবাই বিমানবন্দরের পাশের ক্যাফেতে চা খেতে। একটু রেস্ট নিয়ে ট্যাক্সি ভাড়া করে আমরা থামেল চলে আসলাম। এখানে আমরা একটা হোটেলে সবকিছু ঠিক করে রেখেছিলাম। থামেলে রাতে থাকা হল। 

থামেলের হোটেল থেকে ফ্রেশ হয়েই আমরা হেটে হেটে চলে গেলাম খেতে। হালাল একটা রেস্টুরেন্ট খুঁজতে গিয়ে গেলাম বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টে।

থামেল শহর বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্ট
থামেলে বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া

যদিও তাদের খাবার ভালো ছিলো, কিন্তু প্রচুর সময় নষ্ট করেছে। খিদেয় তখন আমাদের অবস্থা খারাপ।

থামেল শহর নেপাল ভ্রমণ
থামেল শহর

থামেল শহরটা অনেকটা আমাদের পুরাণ ঢাকার মতো। ছোট কিন্তু গুছালো। সন্ধ্যায় বের হয়ে রাস্তা ধরে হাঁটতে ভালোই লাগছিলো।  

এক নজরে থামেল 

কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্র ও পর্যটন হটস্পট হলো থামেল শহর। গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে, বিশেষ করে হিপ্পি যুগ থেকে, কাঠমান্ডুর পর্যটন শিল্পের কেন্দ্র এবং পর্বতারোহীদের জন্য প্রাক-বেস ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত। থামেল তার সরু, জমজমাট গলি-র জন্য বিখ্যাত, যা বিভিন্ন দোকান ও বিক্রেতায় ঠাসা। এখানে ট্রেকিং সরঞ্জাম, হস্তশিল্প, স্যুভেনিয়ার, পশমের জিনিসপত্র, খাবার, ফলমূল ও পেস্ট্রি-সহ বহু জিনিস বিক্রি হয়। এখানকার রাস্তায় কম খরচের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পাব ও ক্লাব রয়েছে, যেখানে পথচারী, রিকশা ও ট্যাক্সি-র ভিড় লেগে থাকে। থামেল হলো কাঠমান্ডুর রাতের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে পর্যটক ও স্থানীয় উভয়ের জন্য ঐতিহ্যবাহী ও কন্টিনেন্টাল খাবার, ক্যাফে এবং লাইভ মিউজিকের নানা আকর্ষণ রয়েছে।

(উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া সামারি)

পোখারার পথে দীর্ঘ যাত্রা 

০১ অক্টোবর – ২য় দিন/মঙ্গলবার – কাঠমুন্ডু টু পোখারা

থামেল শহর, নেপাল ভ্রমণ

পরদিন সকাল সকাল যাত্রা থাকায় ৫টায় উঠেই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে সবাই বেরিয়ে পড়লাম বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে। সকালে ৬.৩০ এর বাস থামেল থেকে ছাড়লো ১০টায়। কারণ রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। আগের দিন ল্যান্ডস্লাইডের কারণে রাস্তা বন্ধ গাড়ি যাওয়াই অফ ছিলো।

আমরা নেপাল যাওয়ার দুই দিন আগে তাদের সব চেয়ে বড় বন্যা হয়। অনেক মানুষ মারা যায়। জায়গাজায়গায় পাহাড় ধসে রাস্তা বন্ধ ছিলো। বন্যার পানি না নামলে আম্মাদের যাওয়াটাই অনিশ্চিত ছিলো।

প্রায় ৫টার পর রাস্তায় থেমে এক জায়গায় বুফের মত নন ভেজ ও ভেজ দিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়া হলো। মাত্র ৫০০ রুপি নিল। মজার ব্যাপার হলো একটা প্রাণ জুস কিনলাম ১৫০ নেপালি রুপিতে। এখানে এগুলার এত দাম পড়ে!

এরপর আবার দীর্ঘ বাস যাত্রা। পোখারার রাস্তা খুবই আঁকাবাঁকা। খাড়া পাহার ঘেঁষে এই রাস্তা দিয়ে অনেক উপড়ে উঠতে হয়। পাহাড় ধসে পোখারার পথ ভয়ংকর রকম জ্যামে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় অবস্থা। যেখানে ৯ ঘণ্টায় যাওয়ার কথা সেখানে আমরা পোখারা গিয়ে পৌছালাম রাত ২টায়। ভাইরে রাত তো শেষ হইয়া যায়। বাস স্ট্যান্ড থেকে ক্যাব ভাড়া করে পোখারা ট্যুরিস্ট হোমে আসলাম রাত ৩টায়। ঘুমাইতে ঘুমাইতে রাত ৪টা।

ফেওয়া লেক ভিউ - পোখরা, নেপাল ভ্রমণ

পোখারা ট্যুরিস্ট হোম ছোটখাট ফ্যামিলি বিজনেস। উনাদের আতিথেয়তা এত ভালো লাগছিলো কি বলব। রুম গুলা অনেক ভালো ছিলো, সাথে খাবার আর সস্তাও ছিলো। যার কারণে আমাদের এই খানে আসা।

এক নজরে পোখারা

পোখরা হলো কাঠমান্ডুর পর জনসংখ্যার হিসাবে নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, যা কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে পোখরা উপত্যকায় অবস্থিত। এই উপত্যকা দিয়ে শ্বেত গন্ধকি নদী প্রবাহিত হয়েছে। ভৌগোলিকভাবে, পোখরা শহরটির উত্তরে মাত্র ১৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত অন্নপূর্ণা রেঞ্জ, যেখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ দশটি পর্বতের মধ্যে তিনটি (ধবলগিরি, অন্নপূর্ণা ১, ও মাকালু) রয়েছে। এ কারণে পোখরা পর্বতারোহীদের বেস ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত। এটি একটি পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং এখানে গোর্খা সেনাদেরও বসবাস রয়েছে।

শহরটি একটি পার্বত্য উপত্যকায় গড়ে উঠেছে, যার উচ্চতায় দ্রুত পরিবর্তন দেখা যায় (সর্বোচ্চ ১৭৪০ মিটার থেকে সর্বনিম্ন ৮২৭ মিটার)। ফেওয়া লেক (৪.৪ বর্গ কিমি) এবং বেঙ্গাস লেক সহ একাধিক হ্রদের উপস্থিতির কারণে পোখরা “হ্রদের শহর” নামেও পরিচিত। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে এর জনসংখ্যা ৩,৫৩,৮৪১ জন, যাদের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

প্রাচীনকাল থেকেই শহরটির সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে; এটি ছিল চীন ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শিক্ষাক্ষেত্রেও কাঠমান্ডুর পরেই এর স্থান, যেখানে মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সহ পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলো সড়কপথ, যার মাধ্যমে কাঠমান্ডু এবং দেশের অন্যান্য অংশে বাস চলাচল করে। এছাড়াও, পোখরা বিমানবন্দর থেকে কাঠমান্ডু, দিল্লি ও লক্ষ্ণৌতে বিমান যোগাযোগ সচল রয়েছে।

(উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া সামারি)

পোখারায় ঘুরাঘুরি 

০২ অক্টোবর – ৩য় দিন/বুধবার 

সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করলাম। এরপর আমি আর কলিগ এক দৌড়ে ফেওয়া লেক সাইডে গেলাম লেকের ভিউ দেখতে। কি সুন্দর এক লেক রে ভাই। ঘনটার পর ঘণ্টা এখানে বসে থাকা যায়।

পোখরার ফেওয়া লেক
ফেওয়া লেক – পোখারা

এক নজরে ফেওয়া লেক

ফেওয়া হ্রদ হলো নেপালের একটি বিখ্যাত মিঠাপানির হ্রদ, যা পূর্বে বৈদাম তাল নামে পরিচিত ছিল। এটি নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং গণ্ডকী প্রদেশের বৃহত্তম হ্রদ, যা প্রায় ৫.৭ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে পোখরা উপত্যকার দক্ষিণে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৪২ মিটার (২,৪৩৪ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত এই হ্রদটির প্রধান আকর্ষণ হলো মাছাপুচ্ছ্রে এবং অন্নপূর্ণা পর্বতশ্রেণীর চূড়ার প্রতিচ্ছবি এর জলে দেখা যায়।

ফেওয়া হ্রদ পোখরা শহরের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র এবং জলক্রীড়ার জন্য জনপ্রিয়। হ্রদের উত্তর তীরটি লেকসাইড নামে একটি ব্যস্ত পর্যটন জেলায় পরিণত হয়েছে, যেখানে অসংখ্য হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বার রয়েছে এবং এটি পোখরা ভ্রমণের সূচনা বিন্দু। এর প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে হ্রদের কেন্দ্রে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ তাল বারাহী মন্দির (বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত) এবং নেপালী রাজপরিবারের ব্যবহৃত রত্ন মন্দির। এছাড়াও, ফেওয়া হ্রদের উপর দিয়ে প্যারাগ্লাইডিং করার জন্য বিখ্যাত সারাংকোট নিকটেই অবস্থিত। হ্রদের জল জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এবং একটি অংশ বাণিজ্যিক মাছ ধরার কাজেও ব্যবহৃত হয়।

(উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া সামারি)

লেকের এখানে অনেক ক্ষণ কাটিয়ে সেখান থেকে আমরা আমাদের এক নেপালি বন্ধুর দাওয়াতে তার রেস্টুরেন্টে গেলাম লাঞ্চ করতে। হোটেল থেকে আমাদের নিজেদের গাড়িতে করে সে নিয়ে গেলো তার চমৎকার রেস্টুরেন্টটায়। সেখানে বেশ কিছু মজাদার নেপালি রানার স্বাদ টেস্ট করা হলো। রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে প্ল্যান করা হল আমরা নেপালের দুটো বিখ্যাত জায়গা শিব মন্দির ও পিস প্যগোডা ঘুরব।

এই দুই জায়গায় উঠতে গিয়ে আমাদের দম বের হয়ে গিয়েছিলো। এক তো গাড়ি দিয়ে অনেক উঁচুতে উঠেছি তার পর আবার হেঁটে আর কত মিটার যে উঠতে হল।

শিব মন্দির - পোখারা নেপাল ভ্রমণ
শিব মন্দির – পোখারা, নেপাল

শিব মন্দির তেমন আহামরি ভালো লাগে নাই আমার। এখান থেকে ভিউ ভালো দেখতে পাওয়া যায়।

পোখারা
পোখারা ভিউ – নেপাল

এক নজরে শিব মন্দির 

পুমডিকোট হলো নেপালের গণ্ডকী প্রদেশের কাস্কি জেলার পোখরার কাছে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি স্টেশন যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই স্থানটি নেপালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিব মূর্তি-এর জন্য বিখ্যাত। মূর্তিটি নিজে ৫১ ফুট লম্বা এবং একটি ৫৭ ফুট উঁচু সাদা স্তূপের উপর অবস্থিত, ফলে সম্পূর্ণ কাঠামোটির উচ্চতা ১০৮ ফুট। এই মূর্তিটি একটি বৃহত্তর প্রকল্পের অংশ, যার মধ্যে ১০৮টি শিব লিঙ্গ এবং শিব-পার্বতীর সুমেরু পর্বতের মডেল সম্বলিত একটি শহীদ স্মৃতি উদ্যান নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত, যা প্রতিবন্ধীদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য হবে। মূর্তিটি সম্পন্ন হওয়ার পর, পুমডিকোট একটি প্রধান ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখান থেকে দর্শনার্থীরা পোখরা উপত্যকা, ফেওয়া হ্রদ, হিমালয় পর্বতমালা এবং বিশ্ব শান্তি প্যাগোডার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।

(উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া সামারি)

শিব মন্দির থেকে নেমে আবার পাহাড় বেয়ে আমরা কাছাকাছি পিস প্যাগোডাতে যায়। এই জায়গায় লিটারালি উচ্চ স্বরে কথা বলা নিষেদ। জায়গাটা আসলেই এত শান্তির আমরা সবাই অনেকক্ষণ উপরে উঠে চুপচাপ বসে ছিলাম। আর উপর থেকে পুরো নিচের ভিউটা কি যে বলব, অসাধারণ!

পিস প্যাগোডা - পোখারা, নেপাল
পিস প্যাগোডার সামনে

নেপাল গেলে অবশ্যই পিস প্যাগোডাতে সময় কাটাতে যাবেন। হাইলি রেকমেন্ডেড!

পিস প্যাগোডা থেকে নেপালের ভিউ
উপর থেকে ফেওয়া লেকের ভিউ

এক নজরে পিস প্যাগোডা 

পোখরা শান্তি স্তূপা হলো নেপালের কাস্কি জেলার আনাদু পাহাড়ে (Anadu Hill, উচ্চতা ১১০০ মিটার) অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, যা বিশ্ব শান্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। ‘শান্তি স্তূপ’ বলতে পিস প্যাগোডা বোঝায়। বিশ্বের আশিটি শান্তি প্যাগোডার মধ্যে নেপালে দুটি রয়েছে, যার মধ্যে এটি অন্যতম।

নির্মাণ ও ইতিহাস

শান্তি স্তূপটি নিপ্পনজান-মিওহোজি-এর প্রতিষ্ঠাতা জাপানি বৌদ্ধ ভিক্ষু নিচিদাৎসু ফুজিই-এর পরিকল্পনা এবং ভিক্ষু মোরিওকা সোনিন ও স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত হয়। ফুজিই ১৯৭৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ সহ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। প্রথম দফা নির্মাণ শুরু হলেও সরকারী ও স্থানীয় বাধার কারণে তা ব্যাহত হয়। দীর্ঘ আঠারো বছরের চরম সংগ্রামের পর, মাননীয় গিরিজা প্রসাদ কৈরালা ১৯৯২ সালে পুনরায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৯৯৯ সালের ৩০ অক্টোবর এটি উদ্বোধন করা হয়। এটি নেপালের প্রথম এবং নিপ্পনজান-মিওহোজি দ্বারা নির্মিত বিশ্বের ৭১তম শান্তি প্যাগোডা। প্রথম উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মিন বাহাদুর গুরুং-এর জমি দানের সম্মানার্থে তাঁর মূর্তি এখানে স্থাপন করা হয়েছে।

স্থাপত্য ও তাৎপর্য

১১৫ ফুট লম্বা এবং ৩৪ ফুট ব্যাস-বিশিষ্ট সাদা এই প্যাগোডাটিতে দর্শনার্থীদের প্রদক্ষিণ করার জন্য দুটি স্তর রয়েছে। দ্বিতীয় স্তরে জাপান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং নেপাল থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বুদ্ধের চারটি মূর্তি রয়েছে, যা বুদ্ধের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলিকে চিত্রিত করে। চূড়ার সোনালী গজুরের নীচে ধর্মচক্র এবং উপরে শ্রীলঙ্কার স্ফটিক পাথর রয়েছে, যা যথাক্রমে ধর্ম ও প্রজ্ঞার প্রতীক। কাছেই অবস্থিত ধম্ম হলে প্রতিদিন বৌদ্ধ আচার-অনুষ্ঠান ও পূর্ণিমার মতো বিশেষ দিনে বৃহৎ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

পর্যটন আকর্ষণ

আনাদু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করায় শান্তি স্তূপা একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র। এখান থেকে অন্নপূর্ণা পর্বতমালা, ফেওয়া হ্রদ এবং পোখরা শহরের এক মনোমুগ্ধকর প্যানোরামিক দৃশ্য দেখা যায়। এই স্থানটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্যের জন্যও বিখ্যাত। এখানে পৌঁছানোর জন্য হাইকিং ট্রেইল, সাইকেলিং ট্র্যাক এবং পাকা রাস্তা রয়েছে। ফেওয়া হ্রদ নৌকা পার হয়ে স্থানীয় গ্রামগুলির মধ্য দিয়ে হেঁটে পৌঁছানো একটি জনপ্রিয় ও দুঃসাহসিক উপায়।

(উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া সামারি)

নেপাল আসার আগে আমার এক কলিগ ঠিক করে আসছিলেন তিনি প্যারাগ্লাইডিং করবেন। আমার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু আসার আগ পর্যন্ত সাহস করিনি। পরের দিন প্যারাগ্লাইডিং করার জন্য ভাই যখন বুকিং দিচ্ছিলেন রাতে তখন কি এক উত্তেজনায় আমিও বুকিং দিয়ে দিলাম। আমার সাথে আমার এক কলিগের স্ত্রীও বুকিং দিলেন। আমরা ৩ জন আগামীকাল পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে আকাশে উড়ব! উত্তেজনায় একেকজনের চোখ চকচক করছিল!

রাতে প্যারাগ্লাইডিং এর বুকিং করেই আমাদের নেপালি বন্ধুর গাড়িতে সারাংকোটের জন্য যাত্রা করলাম। সেই রাতে সারাংকোট চেক-ইন করা। এটা পাহাড়ের খুব উঁচুতে আরেকটা ফ্যামিলি হোটেল। উনাদের ডিশগুলা এত চমৎকার ছিল, খুব ভালো খাবার খাওয়ার জন্য আবার নেপাল যাওয়া যায়!

সারাংকোটে প্যারাগ্লাইডিং 

০৩ অক্টোবর – ৪র্থ দিন/বৃহস্পতিবার

সারাংকোট - নেপাল
সারাংকোটে সকালের ভিউ

সকাল ৫টায় তাড়াতাড়ি উঠেই আমরা সবাই দৌড় দিলাম ওয়াচটাওয়ারের উঠে সারাংকোট এর সূর্যদয় দেখা। পাহাড়ের উপরের বরফের মাঝ দিয়ে যখন সূর্য উঠছিল ঐ দৃশ্য সরাসরি না দেখলে ছবিতে দেখে তার সৌন্দর্য্য বুঝানো সম্বব না। ওয়াচটাওয়ার থেকে নেমে এসে হোটেলে নাস্তা করে আমরা ৩ জন তৈরি হলাম প্যারাগ্লাইডিং এর জন্য। আগ থেকে বলা ছিলো আমাদের ১০টায় ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসবে আমাদের নেয়ার জন্য।

প্যারাগ্লাইডিং এর জন্য যে পাহাড় থেকে আমরা লাফ মারব সেখানে নিয়ে যেতে ১০ মিনিট লাগলো। বেশ খানিকটা হেঁটে উঠতে হয় এখানে। উপরে উঠেই অভিভূত হয়ে গেলাম। একজনের পর একজন গাইড সহ পাহাড় থেকে লাফ দিচ্ছে।

নেপালে প্যারাগ্লাইডিং
উঁচু পাহাড় থেকে নেপালে প্যারাগ্লাইডিং

আমাদের গাইড পুরো জিনিসটা বুঝাই দিলো। কি কি করতে হবে। আমাদের সবার আগে আপু লাফ মারলেন, তারপর আমার কলিগ। আমার বুক দুরুদুরু করছিলো, কিন্তু চোখের সামনে দেখলাম ৬০-৭০ বছরের বিদেশী বুড়াবুড়ী লাফ দিচ্ছে। ভাবলাম কি আছে কপালে। 

সেরা একটা সময় প্যারাগ্লাইডিং এ গেলো। লাফ দেওয়ার আধা ঘণ্টা আগ থেকে সব ভয়ডর মন থেকে মুছে গেছে। যখন লাফ দেওয়ার জন্য গাইডের সাথে দৌড় দিলাম, আর পাহাড় থেকে যখন গাইড লাফ দিলো উত্তেজনায় মনে হচ্ছিলো মরে যাব। কিন্তু যেই আকাশে আমরা পুরোপুরি ভেসে উঠলাম মন থেকে সব ভয়ডর চলে গেলো। 

ঐ সময়ের অনুভূতি বলে বুঝানো যাবে না। একটা পাখি আকাশে উড়ার সময় যে অনুভূতি হয় আমার সেই অনুভূতি হচ্ছিলো। আমি আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছি, ঠিক আমার ২০-৩০ গজ পাশেই চিল উড়তেছে। আর নিচে ফেওয়া লেইক। উহ! কি অভিজ্ঞতা! 

নেপালে প্যারাগ্লাইডিং
নেপালে প্যারাগ্লাইডিং করার একটা মুহুর্ত

প্যারাগ্লাইডিং একবার করার পর বার বার তার নেশা পেয়ে বসে। আবার নেপাল গেলে অবশ্যই প্যারাগ্লাইডিং করব, ইনশা আল্লাহ!

প্যারাগ্লাইডিং করে নেমেই কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আমাদের গাড়িতে করে আবার পোখারা ট্যুরিস্ট হোমে পৌঁছে দিলো। বাকিরা সারাংকোট থেকে আমাদের লাগেজ নিয়ে আগেই চলে আসছিলো। তারা ওইখান থেকে নেমেছে ক্যাবল কারে।

এরপর আমাদের প্ল্যান ছিলো আসতাম যাওয়া। গাড়ি ঠিক করে রওনা দিয়েও অর্ধেক পথ গিয়ে আমাদের ক্যান্সেল যাত্রা হলো। কারণ ওইখানের রাস্তা খুব বাজে ছিলো প্লাস বৃষ্টি চলে আসছিলো তবে আসতাম যাওয়ার পথে নেমে কফি খেতে খেতে নেপালের প্রকৃতি দেখতে ভালোই লেগেছিল।

পোখারা ট্যুরিস্ট হোমে ব্যাক করে আমরা লাঞ্চের জন্য রওনা দেই হালাল ফুড ল্যান্ডে। এটা পাকিস্থানি কিছু লোক চালায়। মহিষের মাংস যে এত মজা হতে পারে তা এইখানে না খেলে বুঝতাম না। আর আলু ও টমেটো ভর্তা, ভাইরে ভাই কি আর বলব। অসাধারণ। 

ফেওয়া লেক - পোখারা, নেপাল
ফেওয়া লেকের সামনে (পোখারা, নেপাল)

খাওয়ার পর ফেওয়া লেইকের পাশে বসে কলিগদের সাথে আড্ডা কারণ ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছিলো। রাতে আমরা নরমাল খেয়ে বের হলাম নেপালের রাতের অভিজ্ঞতা নিতে। কলিগ সবার সাথে আড্ডা দিয়ে চমৎকার ভালো একটা স্মৃতি তৈরি হল। 

এক নজরে সারাংকোট 

সারাংকোট হলো নেপালের কাস্কি জেলার পোখরা শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং এটি পোখরায় আগতদের জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি পোখরার পশ্চিম দিকে ১৬০০ মিটার উচ্চতার একটি পাহাড়ের ওপর অবস্থিত। সারাংকোট মূলত এর মনোমুগ্ধকর হিমালয় দৃশ্যের জন্য পরিচিত; এখান থেকে ধৌলাগিরি, অন্নপূর্ণা এবং মানাসলুর পর্বতমালা দেখা যায়।

এছাড়াও, পাহাড়ের ওপর অবস্থিত ভিউ টাওয়ার থেকে ফেওয়া হ্রদ সহ উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত পোখরা শহরের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় এবং এখানকার সূর্যোদয় দেখার জন্য পর্যটকরা বিশেষভাবে ভিড় করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সারাংকোটকে বিশ্বের অন্যতম সেরা প্যারাগ্লাইডিং স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পোখরা বাগ্লুং হাইওয়ে থেকে মিরুয়া হয়ে সারাংকোট পর্যন্ত হেঁটে পৌঁছাতে প্রায় ৯০ মিনিট থেকে ১.৫ ঘণ্টা সময় লাগে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, সারাংকোটের জনসংখ্যা ছিল ৫,০৬০ জন।

(উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া সামারি)

পোখারাতে ফিরে আসা

০৪ অক্টোবর – ৫ম দিন/শুক্রবার

এই দিন পোখারাতেই আমরা সারাদিন সময় কাটালাম। দুপুরে যথারিথী হালাল ফুড ল্যান্ডে খাওয়া। মহিষের এই ডিশ কোনভাবেই মিস করা যায় না। লাঞ্চ করে বের হয়ে বাস্কিনরবিনে আইসক্রিম খাওয়া। আইসক্রিম হাতে নিয়ে হেঁটে হেঁটে আমরা পৌঁছে গেলাম লেইক সাইডে। এখানে বোটিং এর ব্যবস্থা ছিল। একটা বোট ভাড়া করে আমরা নেমে পড়লাম লেকে। লেকের সৌন্দর্য্য পানিতে বসে উপভোগ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বৃষ্টি চলে আসছিলো তাই তাড়াতাড়ি আমরা হেটেলে ফিরলাম। রাতে কলিগদের  সাথে জীবনের সবচেয়ে বড় বার্গার খাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে খুবই খারাপভাবে হার মানলাম! এরপর লেইকসাইডে ফিরে কলিগদের সাথে নাইট চিলিং হলো খুব।

পোখারাতে শেষ দিন 

০৫ অক্টোবর – ৬ষ্ঠ দিন/শনিবার

সকালে পোখারা ট্যুরিস্ট হোম থেকে চেক আউট করে আর কলিগ ও তার স্ত্রীর সাথে ডেভিস ফল দেখতে যাওয়া। ডেভিস ফল দেখে এসে আমি নিজে নিজে সময় কাটানো। ডেভিস ফল দেখতে গুহার ভেতর দিয়ে অনেক নিচে নামতে হয়। অক্সিজেন অনেক কমে যায়, সবাই আস্তে আস্তে এখানে নামছিল। ভেতরে জলপ্রপাত দেখে আবার উপড়ে উঠতে উঠতে আমরা এত ঘেমে উঠছিলাম।  

ডেভিস ফল জায়গাটা এত চমৎকার। এখানে একটা মার্কেট আছে যেটা ভারতীয়রা ডমিনেট করে। যেখানে আপনি কম দামে কেনাকাটা করতে পারবেন।

বিকেলে লেইক সাইডের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে লাঞ্চ করতে করতে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিলো। চিন্তা করছিলাম, কি ভাগ্য আমার! পাসপোর্ট বাসায় ফেলে আসার পরও নেপাল ঘুরতে আসছি এই সুন্দর দৃশ্য গুলো উপভোগ করতে পারছি আল্লাহর শুকরিয়া। শুধু আফসুস লাগছিলো নিজের পরিবারকে যদি এইসব উপভোগ করাতে পারতাম। 

ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যা ৭টার বাসে বাস স্ট্যান্ড থেকে আমরা কয়েকজন থামেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রাতে যেখানে খেতে নামাল সেই রেস্টুরেনটে বেশ ভালো নেপালি মমো খেলাম।

এক নজরে ডেভিস ফল

দেবীর জলপ্রপাত (পাতাল কো চাঙ্গো)

দেবীর জলপ্রপাত (নেপালি: पाताले छाँगो), যার আভিধানিক অর্থ “পাতালের জলপ্রপাত”, হলো নেপালের কাস্কি জেলার পোখরাতে অবস্থিত একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং দর্শনীয় জলপ্রপাত। এটি পোখরার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।

জলপ্রপাতটির জল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ ফুট (৩০ মিটার) নিচে চলে গিয়ে প্রায় ৫০০ ফুট (১৫০ মিটার) লম্বা একটি প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ তৈরি করে। জলপ্রপাতটির উৎস হলো ফেওয়া লেক বাঁধ। সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসে এই জল গুপ্তেশ্বর মহাদেব গুহা বা “মাটির নীচের গুহা”-এর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা তার জটিল নকশার কারণে আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান।

জলপ্রপাতটির নামকরণ একটি মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত; ১৯৬১ সালে এখানে সাঁতার কাটতে গিয়ে এক সুইস মহিলা ডুবে যান এবং তিন দিন পর ফুসরে নদীতে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তার বাবা প্রথমে মেয়ের নাম অনুসারে এটির নাম “ডেভিড’স ফল” রাখতে চাইলেও পরে এটি “দেবীর ফল” নামে পরিচিত হয়।

পর্যটকদের বিনোদনের জন্য এখানে একটি ভাগ্য পুকুর রয়েছে, যেখানে দর্শনার্থীরা মুদ্রা ছুঁড়ে ভাগ্য পরীক্ষা করেন। এছাড়া, ঐতিহ্যবাহী নেপালি বাড়ির মডেল এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত নেপালিদের মূর্তিও রয়েছে, যেখানে ছবি তোলার সুযোগ পাওয়া যায়।

(উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া সামারি)

থামেলে ঘুরাঘুরি 

০৬ অক্টোবর – ৭ম দিন/রবিবার 

খুব সকালে থামেলে এসে নামা। হেঁটে হেঁটে আমাদের খুব ঝামেলা হল হোটেল খুঁজে পেতে। কারণ নেপালে ১১টার আগে চেকইন করা যায় না। আর আর্লি চেকইন করলে আলাদা ফি দিতে হয়। অনেক খুঁজে আমরা ৪ জন্য একটা হোটেলে উঠলাম ৬টায় ফ্রেশটেশ হয়ে ঘুমালাম। ১০টার দিকে উঠে বাইরে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করলাম এরপর সারাদিন দরবার স্কয়ার,  স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির, ও পশুপতি নাথ মন্দির এই তিনটা জায়গায় ঘোরা। এই তিনটা জায়গা নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে লিখছি। 

স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির - নেপাল
স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির

স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির, ও পশুপতি নাথ মন্দির থামেল থেকে একটু দূরে হওয়ায় আমরা ট্যাক্সি ভাড়া করে সেখানে রওনা দেই। স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির অনেক উঁচুতে ভেতরে অনেক বানর। চুপচাপ বসে উপর থেকে শহরের ভিউ দেখতে ভালো লাগে।

পশুপতি নাথ মন্দির অনেক বড়। এখানে অনেক রকম মানুষ প্রার্থনার জন্য আসেন। আমরা ওইখানে থাকতেই বেশ বড় একটা উপাসনা শুরু হয়। আমার দুই কলিগ সনাতনী তারা সেখানে অংশগ্রহণ করেন। 

দরবার স্কয়ার অনেক বড় জায়গা। অনেক বড় বড় স্থাপনা। সাধুরা চুপচাপ বসে আছে। কবুতর উড়ছে, মানুষরা আসে যায়। সবাই ছবি তুলতেছে। অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে এখানে। আলাদা করে চা খেতে জায়গাটায় অনেক ভালো লেগেছে।

এরপর দরবার স্কয়ারে যাওয়া রাতে কেনাকাটা করতে। এটা আমার অনেক বড় ভুল ছিলো। কারণ রাত ৮টার আগেই সবকিছু এখানে বন্ধ হয়ে যায়। এটিএম থেকে ক্যাশ বের করলেও তাই মনের মত কেনাকেটা করতে পারলাম না। এটা আসলে আমার সকালেই করে ফেলা উচিত ছিলো। এই ভুলটা কখনোই করবেন না নেপাল ঘুরতে গেলে। যেখানেই যাবেন কেনাকাটার সুযোগ থাকলে করে ফেলবেন। 

রাতে একটা অসাধারণ রেস্টুরেন্টে অসাধারণ একটা থালার ডিশ খেলাম। এরপর খানিকটা এদিকসেদিক ঘুরাঘুরি করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া কারণ সকালেই আমাদের ফ্লাইট ধরতে হবে।

এক নজরে দরবার স্কয়ার

কাঠমান্ডু দরবার স্কোয়ার (নেপালি: হনুমানঢোকা দরবার বা বসন্তপুর দরবার ক্ষেত্র) হলো নেপালের কাঠমান্ডুর একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। কাঠমান্ডু উপত্যকার তিনটি দরবার স্কোয়ারের মধ্যে এটি অন্যতম।

যদিও এই স্কোয়ারের নির্মাণকাজ তৃতীয় শতাব্দীতে শুরু হয়েছিল, তবে এর প্রধান স্থাপনাগুলি মল্ল এবং শাহ রাজবংশের সময়ে নির্মিত হয়। বাইরের কমপ্লেক্সটিতে ষোড়শ শতকে মল্ল রাজাদের তৈরি অসংখ্য মন্দির রয়েছে, যা নেওয়ার স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যযুক্ত সূক্ষ্ম কারুকার্য দ্বারা সজ্জিত। এই স্কোয়ারটি প্রাসাদ কমপ্লেক্স দ্বারা পরিবেষ্টিত, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো নৌতালে দরবার, যা নেপালের একীকরণের স্মরণে পৃথ্বী নারায়ণ শাহ কর্তৃক নির্মিত একটি নয় তলা বিশিষ্ট প্রাসাদ।

স্কোয়ারের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কুমারী চৌক বা কুমারী বাহল নামে একটি তিনতলা মন্দিরে কুমারী (হিন্দু দেবী দুর্গার জীবন্ত প্রতিমূর্তি) বসবাস করেন ও পূজিত হন।

দুর্ভাগ্যবশত, ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিলের ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে এই স্কোয়ারটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শতবর্ষ প্রাচীন কাঠের কাঠামো কাষ্ঠমণ্ডপ সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

দরবার স্কয়ার নেপাল ভ্রমণ
দরবার স্কয়ারে আমি

এক নজরে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির

স্বয়ম্ভূনাথ (স্বয়ম্ভূ স্তূপ) হলো কাঠমান্ডু শহরের পশ্চিমে একটি টিলার চূড়ায় অবস্থিত নেপালের অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মীয় কমপ্লেক্স। এই কমপ্লেক্সে লিচাভি যুগের সময়ের তৈরি মন্দির, মঠ এবং একটি প্রধান স্তূপ রয়েছে, যার সঙ্গে পরবর্তীতে তিব্বতি বিহার, জাদুঘর এবং গ্রন্থাগার যুক্ত হয়েছে।

স্থাপত্য ও প্রতীক

স্তূপটি তার স্থাপত্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এটি একটি গম্বুজের উপর অবস্থিত ঘনকাকৃতি কাঠামো দ্বারা গঠিত, যার চারদিকে বুদ্ধের চোখ এবং ভ্রু আঁকা আছে, যা প্রজ্ঞা ও করুণার প্রতীক। এই চোখ দুটির উপরে রয়েছে তৃতীয় নয়ন, এবং এদের মাঝে নাকের প্রতীক হিসাবে আঁকা একটি কোঁকড়ানো প্রতীক (নেপালি লিপিতে ‘এক’ সংখ্যাটির মতো), যা পৃথিবীতে বিদ্যমান সবকিছুর ঐক্যকে তুলে ধরে। স্তূপের শীর্ষে থাকা তেরটি চূড়া আধ্যাত্মিক উপলব্ধির ১৩টি ধাপকে প্রতীকায়িত করে, যা বুদ্ধত্ব অর্জনের জন্য প্রয়োজন। এছাড়াও, স্তূপের চারদিকে পাঁচ বুদ্ধের খোদাই রয়েছে।

ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব

যদিও এটি একটি বৌদ্ধ স্থান, তবে এটি হিন্দুদের কাছেও অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র; এমনকি ১৭শ শতাব্দীতে পূর্ব সিঁড়ি নির্মাণকারী শক্তিশালী রাজা প্রতাপ মল্লা সহ বহু হিন্দু রাজা এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এটিকে নেওয়ার বৌদ্ধ ধর্মের বজ্রযান ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই কমপ্লেক্সের দুটি প্রবেশ পথ রয়েছে—পূর্ব দিকে একটি দীর্ঘ সিঁড়ি এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে একটি গাড়ি রাস্তা। সিঁড়ির শীর্ষে প্রথম দর্শনীয় বস্তু হলো বজ্র।

বানর ও সাম্প্রতিক ঘটনা

কমপ্লেক্সের উত্তর-পশ্চিম অংশে বাস করা বানরের দল এখানকার একটি বিশেষ আকর্ষণ। কিংবদন্তি অনুসারে, এই বানরগুলি জ্ঞান ও শিক্ষার বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী-এর মাথার উকুন থেকে রূপান্তরিত হয়েছিল। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশেষত ২০১১ সালে বজ্রপাত এবং ২০১৫ সালের নেপাল ভূমিকম্পে এই প্রাচীন কমপ্লেক্সটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির থামেল শহর নেপাল
স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরে আমি

এক নজরে পশুপতি নাথ মন্দির

পশুপতিনাথ মন্দির হলো নেপালের কাঠমান্ডুতে পবিত্র বাগমতী নদীর তীরে অবস্থিত একটি অত্যন্ত বিখ্যাত ও পবিত্র হিন্দু মন্দির কমপ্লেক্স, যা ভগবান শিবের (পশুপতি) উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটি অংশ, যা ২৪৬ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এতে ৫১৮টি ছোট মন্দির রয়েছে।

ইতিহাস ও স্থাপত্য

মন্দিরটির সঠিক নির্মাণ তারিখ অজানা, তবে এটি কাঠমান্ডুর প্রাচীনতম হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম। বর্তমান দোতলা প্যাগোডা স্থাপত্যশৈলীর মূল মন্দিরটি ১৬৯২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। কথিত আছে, লিচ্ছবি রাজা প্রচণ্ড দেব এটি নির্মাণ করেন। মন্দিরটি সোনার আবরণযুক্ত তামার দুটি ছাদ এবং রুপার চাদর দিয়ে ঢাকা চারটি প্রধান দরজা দ্বারা সজ্জিত। এর অভ্যন্তরে একটি সোনার চূড়া (চূড়া) এবং দুটি গর্ভগৃহ রয়েছে। পুরাণ অনুসারে, শিব এবং পার্বতী এখানে হরিণের রূপ ধারণ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে ভাঙা শিংটি একটি ঐশ্বরিক লিঙ্গ হিসেবে পূজিত হতে শুরু করে। তবে, ২০১৫ সালের নেপালের ভূমিকম্পে প্রধান মন্দির অক্ষত থাকলেও বাইরের কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

প্রবেশাধিকার ও উৎসব

মন্দির কমপ্লেক্সের প্রধান প্রবেশদ্বার পশ্চিম দিকে অবস্থিত। কঠোর নিরাপত্তা বিধিনিষেধের কারণে, মন্দির প্রাঙ্গণে সাধারণত কেবল দক্ষিণ এশীয় প্রবাসী হিন্দু এবং নেপালি ও তিব্বতি বৌদ্ধদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। অন্যান্য অ-হিন্দু দর্শনার্থীরা নদীর সংলগ্ন দিক থেকে মূল মন্দির দেখতে পারেন। অভ্যন্তরীণ মন্দির ভক্তদের জন্য সকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে, তবে গর্ভগৃহে প্রবেশের অনুমতি নেই। এখানে সারা বছর মহা শিবরাত্রি এবং তিজ উৎসবের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান পালিত হয়, যার মধ্যে তিজ অন্যতম প্রধান উৎসব।

(উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া সামারি)

পশুপতি নাথ মন্দির থামেল শহর নেপাল
পশুপতি নাথ মন্দির, ২০২৪

নেপালের শেষ দিন

০৭ অক্টোবর – ৮ম দিন/সোমবার – বাংলাদেশ ফেরা

সকালে তাড়াহুড়া করে ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে জীবনের আরেকটা বড় ভুল করে ফেলতে গিয়েছিলাম। আমেরিকান ব্রেকফাস্টে যে কি থাকে তাতো জানেনই। হারাম জিনিস মুখে চলে যাইত আরেক্টু হলে। পরে আর ঐখানে খাওয়া হল না। দাম দিয়ে বেরিয়ে যত তাড়াতাড়ি কেনাকাটা করা যায় করে ফেললাম। 

চেক আউট করতে গিয়ে আমাদের ঝামেলা বাধাল হোটেল রিসিপশনিস্ট। সে আমাদের কাছ থেকে আর্লি চেক-আউটের চার্জ রাখতে চাইছিল। আমরা তো খুব রেগে গেলাম, কারণ সে চেক ইনের সময় আমাদের এটা বলে নি। এখন প্রায় জোর করে চার্জ ধরছিল! পরে হোটেল ম্যানেজারকে ডেকে এনে ব্যাপারটা মিটমাট হল। দৌড়ে বের হয়ে আমরা এয়ারপোর্টের জন্য ট্যাক্সি ধরলাম। আমাদের বাকি কলিগরা সবাই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলো। 

নেপালকে শেষ বিদায় জানিয়ে আমরা সবাই বাংলাদেশের উদ্দেশ্য প্ল্যানে উঠলাম। অসাধারণ কিছু স্মৃতি নিয়ে আমরা ঢাকায় এসে নামলাম দেড় ঘণ্টার মাঝেই। 

ঢাকা থেকে সিলেট বাসে যাব না গাড়িতে এই জিনিস ঠিক করতে করতে বাসের টিকেট গচ্চা দিয়ে সবাই শেষমেশ বিমানের টিকেট কেটে রাত ১০টার ভেতর বাসায় চলে আসলাম। 

এই ৭টা দিন যে কিভাবে গেলো, মুহুর্ত গুলা যেন সাই সাই করে উড়ে চলে গেলো। কিন্তু সবার সাথে নেপালে কাটানো এই মুহুর্ত গুলো সারাজীবনের একটা সুন্দর স্মৃতি হয়ে রইবে। 

নেপাল এয়ারপোর্ট নেপাল ভ্রমণ
বিদায় নেপাল

যারা প্রথমবার দেশের বাইরে বেড়াতে যেতে চান তাদের আমি বলব নেপাল যান। এখানে খরচও কম ভিসাও সহজে মিলে। ৭ দিনের প্ল্যান করলে একা একজন ৭০-৮০ হাজারে ঘুরে আসতে পারবেন। আমি তো ট্র্যাকিং করি নাই, ওইটা করলে অভিজ্ঞতাটা আর দারুণ হত। 

আমার ইচ্ছা আছে আবার নেপাল যাওয়ার। ট্র্যাকিং করব, আর কিছু এক্টিভিটি করব। আবার প্যারাগ্লাইডিং করব। 

৭ দিনে আসলে এত সুন্দর একটা দেশ ঘুরে দেখে শেষ করা যায় না!

কেমন লাগলো আমার নেপাল ভ্রমণ ব্লগ? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না! 


ডিসক্লেইমারঃ এই লেখায় ব্যবহৃত ছবিগুলো আমার এবং আমার কলিগদের তোলা। দয়া করে কোথাও এই ছবি ব্যবহার করলে সোর্স নিশনামা উল্লেখ করে দিবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.