আমার শিক্ষকেরা

শিক্ষক দিবসে প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা!

প্রতিদিনকার মতন স্কুলে এসেছি।

চেয়ারে ব্যাগ রেখে সবার মুখের দিকে তাকালাম। কেমন যেন থমথমে পরিবেশ। কারো কারো চোখে পানি।

খবরটা শুনে হৃদয়ে বজ্রপাতের মত অবস্থা হল। আমাদের প্রিয় নিজাম স্যার এর অন্য জায়গায় চাকরি হয়ে গেছে। তিনি আজ আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন।

স্যার এর আগে খবরটা জানান নাই। কারণ আমরা সেটা খারাপভাবে নিব সেটা জানতেন। আমরা এই ধাক্কাটা সহ্য করতে পারব না। নিজাম স্যার আমাদের সবচেয়ে প্রিয় স্যার ছিলেন (এখনো আছেন) তাঁকে যেমন প্রচন্ড ভয় পেতাম তেমনি প্রচন্ড শ্রদ্ধা ও ভালোবাসতাম। হঠাৎ করে তাঁর এই চলে যাওয়ার খবরে আমরা সত্যিই ভেঙে পড়েছিলাম।

প্রথম ক্লাসেই স্যার আসলেন। স্বভাব মতই স্যার নিজের হিউমার দিয়ে সবাইকে হাসালেন। আমরা হাসলামও কাঁদলাম। সবারই মন খারাপ। কেউ কেউ খুব কাঁদছে।

নিজের চোখের পানি দেখানোটা বা ভালোলাগা সবার সামনে প্রকাশকে আমি সব সময় সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখে এসেছি। তাই সব সময় নিজেকে কঠিন ও নিষ্ঠুর হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপন করি, সেই বুঝ হওয়ার পর থেকে।

কিন্তু সেদিন অনেক কষ্ট হচ্ছিল নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে। স্যারের দিকে তাকাতেও কষ্ট হচ্ছিল। নিজাম স্যারের কাছে ভালোবাসা শাসন দুটোই পেয়েছি। মনে আছে স্যারের কাছে প্রথম মার খেয়েছিলাম ক্লাসে বসে পুর্ব পশ্চিম পড়ার জন্য! স্যারের কোন ক্লাসই কখনো মিস করা হয় নাই। স্যার আমাদের কেমিস্ট্রি পড়াতেন। উচ্চতর গণিত পড়ানোর জন্য স্যার সেসময় কম কষ্ করেন নাই। ছুটির পরও পড়াতেন।

স্যার বুঝতে পারছিলেন সবার মনের অবস্থা। ক্লাস শেষে সবাই মনমরা হয়ে বসে ছিল। খুব কষ্টে নিজেকে শান্ত রাখছিলাম। পরের ক্লাস ছিল আরেক প্রিয় স্যার সুজিত স্যারের। স্যার কেমনে কেমনে জানি আমাকে দেখেই আমার মনের অবস্থা বুঝে নিয়েছিলেন। ক্লাস থেকে বাইরে বের করে এনেছিলেন দোকানে পাঠাবার কথা বলে। করিডোর দিয়ে হাঁটতে স্যার কাঁধে হাত রেখে বুঝ দিচ্ছিলেন। সেই প্রথমবার আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি। চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি। স্যার কি বলছিলেন তার কিছুই কানে ঢুকছিল না। স্যার আর কি বুঝ দিবেন সুজিত স্যার নিজেই ২-৩ বার চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার আমাদের টানে ফিরে এসেছিলেন। এমনি ছিল আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা!

আজকে শিক্ষক দিবস।

ফ্ল্যাশব্যাক এর মত সেদিনটা ভেসে উঠছিল চোখের সামনে।

আমার শিক্ষক
দিলু মিয়া স্যার, যিনি আমাদের জীবন আলোকিত করেছেন। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন। আমীন।

আমি খুব ভাগ্যবান যে স্কুল জীবনে আমি নিজাম স্যার, সুজিত স্যারের মত শিক্ষকদের সান্নিধ্য ও ভালোবাসা পেয়েছি। শুধু তাঁরাই না। Hazrat Ayesha Siddiqua (R) Collegiate School এ পড়াশুনার দরুন Swapan sir, Bipresh sir, Shakil sir, Nirbash sir, Monowar sir সহ আরো অনেক প্রিয় স্যার ম্যাডামদের ভালোবাসা ও সান্নিধ্য পেয়েছি। ম্যাডামদের মধ্যে জয়ন্তী ম্যাডাম, সাগরিকা ম্যাডাম এর কথা উল্লেখ না করলেই না।বেশিরভাগ স্যার ম্যাডাম আমার লিস্টে নাই তাই এখানে যুক্ত করতে পারছি না কিন্তু তারা স্মৃতিতে অম্লান।তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কমতি নেই।

আমার শিক্ষক
আমাদের প্রিয় ৩ হেড স্যার, যারা আমাদের ভিত গড়ে দিয়েছেন।
আমার শিক্ষিকারা
আমাদের প্রিয় শিক্ষিকারা!

তাদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা ও জীবন চলার পথে যে অনুপ্রেরণা পেয়েছি তার প্রতিদান দেওয়া কল্পনারও অতীত। আজকের এই শিক্ষক দিবসে মনপ্রান থেকে একটাই দোয়া করি আমার প্রিয় স্যার ম্যাডামরা যে যেখানে আছেন সবাই ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন, সপরিবারে সুখে থাকেন। 🙂

আমার প্রিয় স্যার ম্যাডামদের শুধু এটাই বলতে চাই, আপনার ছাত্র হতে পেরে আমি সব সময়ই গর্বিত। ☺

~ নিশাত (ব্যাচ ২০০৫)

( লেখাঃ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬)

আমার শিক্ষকেরা
আমার প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ!

Similar Posts

এই লেখা পড়ে আপনার কেমন লেগেছে? কমেন্ট করুন ও আমাকে জানান! আসুন এই আলাপের মাধ্যমে একই ইন্টারেস্টে আমরা বন্ধু হই!

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.