Ryan Trahan এর ৩০ দিনের পেনি সিরিজ | ক্রিয়েটর ইকোনমি ২য় পর্ব
Ryan Trahan এর ৩০ দিনের Daily Vlog+Challenge ভিত্তিক পেনি সিরিজ দেখা শেষ করলাম।
What a content man! A class! অনেক দিন পর ইউটিউবে এমন কোন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের সিরিজ দেখলাম। Amazing!
সিরিজটা দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, এমন কোন সিরিজ কি বাংলাদেশের কোন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বানিয়ে দেখানোর সাহস পাবে। তাও এই বাজেটে? One penny? এক পয়সার চ্যালেঞ্জ?
নাহ, আমি আর আপনি ভালো করেই জানি এরকম এপ্লাস কন্টেন্ট বাংলাদেশের কোন ক্রিয়েটর বানাতে পারবে না। তাদের দৌড় ওই সস্তা কন্টেন্ট আর সহজ ভিউ পর্যন্তই।
যাকগে, এদের কথা বাদ দেই। বলছি, Ryan Trahan এর পেনি সিরিজের কথা।
এই সিরিজে রায়ান আমেরিকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে থাকা আরেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মিস্টার বিস্টকে এক পেনি পৌছে দেবে। তবে তাকে তার এই জার্নি শুরু করতে হবে কোন কিছু ছাড়া মাত্র এক পেনি দিয়ে।
ব্যাপারটা মনে করুন, এরকম- বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া আপনাকে পৌছাতে হবে আপনাকে মাত্র ১ পয়সা দিয়ে। এক পেনি মানে ডলারের ০.০১ মাত্র।
এখান আবার রায়ানকে ৩টা রুলস ফলো করতে হবে-
রুল ১ঃ সব প্রফিট ওই এক পেনি থেকে আসতে হবে।
রুল ২ঃ সকল প্রকার খাওয়া, থাকা ও ট্রান্সপোর্টেশন ইত্যাদির খরচ অবশ্যই ওই পেনির প্রফিট থেকে আসতে হবে।
রুল ৩ঃ ৩০ দিনের মধ্যে আমেরিকা ক্রস করতে হবে ও মিস্টার বিস্টের হাতে ৩০ তম দিনে এক পেনি পৌছে দিতে হবে।
কিন্তু সে এত কষ্ট করে মিস্টার বিস্টকে এই এই পেনির কয়েন কেন দিতে যাচ্ছে? এটা কি শুধু কন্টেন্ট বানানোর জন্য?
নাহ। Ryan Trahan এর এই পেনি সিরিজের লক্ষ্য Feeding America নামের চ্যারিটির জন্য ১ লাখ ডলার ফান্ড রেইজ করা। সে এখানে মিস্টার বিস্টকে ইউজ করছে অন্যদের এটেনশন গ্রেবিং করার জন্য। কারণ ক্রিয়েটর ইকোনমি নিয়ে যাদের জানাশোনা আছে তারা জানেন মিস্টার বিস্ট one of the greatest entertainer on YouTube!
[নোটঃ Feeding America হচ্ছে আমেরিকার একটা সবচেয়ে বড় চ্যারিটি সংগঠন যারা আমেরিকায় হাংগার নিয়ে কাজ করে। এদের কার্যক্রম ব্যাপক।]
আর ৩০ দিনের ভেতর এক পেনি দিয়ে আমেরিকা পাড়ি দিয়ে মিস্টার বিস্টকে এক পেনি দেওয়ার মাধ্যমে অনেক বেশি এটেনশন সে তার ফান্ড রেইজিংয়ে আনতে পারবে। একই সাথে ক্রিয়েটর ইকোনমির অন্য সব কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের এর সাথে যুক্ত করতে পারবে।
আর আসলে হয়েছেও তাই। এই ৩০ দিনে রায়ান তার ১ লাখ ডলারের লক্ষ্য ছাড়িয়ে পুরো ১.৪ মিলিয়ন ডলার ডোনেশন তুলতে সক্ষম হয়। চিন্তা করেন তার গোল ছিল মাত্র ১ লাখ ডলার! সেখানে তুলেছে ১.৪ মিলিয়ন ডলার!
সবচেয়ে মজার ছিল, ডোনেশনের বিভিন্ন ধাপের রিওয়ার্ড গুলো। মানে একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট ডোনেট করলে দাতা কিছু রিওয়ার্ড পাবে। যেমন ৫ হাজার ডলার ডোনেট করলে রায়ান ভিডিওতে দাতার নাম বলবে, এক লাখ ডলার ডোনেট করলে দাতার পছন্দের ট্যাটু করবে নিজের শরীরে এবং সবচেয়ে মজার ছিল “The Great Reset”!
এইখানে কেউ ৫০ হাজার ডলার ডোনেট করলে রায়ান তার সারাদিনে যা কামাই করছে তা একেবারে রিসেট হয়ে এক পেনিতে চলে আসবে! পুরা সিরিজে এটা অনেক মজার ছিল। অনেকে বিভিন্ন সময় ৫০ হাজার ডলার ডোনেট করেছে জাস্ট রায়ানকে রিসেট করে দেওয়ার জন্য।
দেখা গেল, রায়ান সারাদিন পরিশ্রম করে ৮০ ডলার আয় করে রাতে রাস্তায় ধারে হ্যামেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডোনেশন চেক করতে গিয়ে দেখে যে কেউ ৫০ হাজার ডলার ডোনেট করে দিয়েছে। আর গ্রেট রিসেট এক্টিভেট হয়ে গেছে।
গ্রেট রিসেট এক্টিভেট হওয়ার মানে রায়ান ওই ৮০ ডলার ব্যবহার করতে পারবে না। তাকে আবার ওই ০.০১ পেনি থেকে শুরু করতে হবে। রায়ানের স্ট্রাগল দেখাটা মজার ছিল। তাকে গ্রেট রিসেট থেকে বাচতে নানা ভাবে স্ট্র্যাটেজাইজ করতে হয়েছে পুরো সিরিজে।
কারণ প্রতিদিনের আয় দিয়ে তাকে নিজের খাওয়া, থাকা ও পরবর্তী শহরে পৌছাবার ট্রান্সপোর্ট এর ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এর জন্য রায়ানকে কি না কি যে করতে হয়েছে না দেখলে বুঝতে পারবেন নাঃ
➡️ পানির বোতল বিক্রি
➡️ সোডা বিক্রি
➡️ উবার ইটসে ফুড ডেলিভারি
➡️ কুকুর বিড়ালকে টাকার বিনিময়ে হাটাতে নিয়ে যাওয়া (হ্যা এটা ইউএসে একটা বিজনেসই, ওদের আলাদা এপই আছে এটার)
➡️ মানুষকে জোকস বলে হাসানো ১ ডলারের বিনিময়ে
➡️ মানুষের ক্যারিকেচার আঁকিয়ে দেওয়া টাকার বিনিময়ে
➡️ মানুষের ফার্মে গিয়ে কাজ করা
➡️ গাড়ির টায়ার পরিষ্কার করা
কতভাবেই না মাথা খাটিয়ে টাকা আয় করেছে রায়ান। এর মধ্যে ছিলো ম্যাকডোনাল্ডস ও চিপোলে থেকে কিভাবে কম টাকায় খেয়ে সারাদিন কাটানো যায়। মানি ম্যানেজমেন্ট নিয়েও অনেক কিছু শেখার আছে এই সিরিজে। কিভাবে ফ্রুগাল থেকেও মাস কাটিয়ে দেওয়া যায় তা রায়ানকে না দেখলে জানতাম না!
Ryan Trahan এই ৩০ দিনে কি পরিমাণ পরিশ্রম করেছে তা না দেখলে বিশ্বাস হয় না। নিজের জানপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলো। নিজের স্ত্রী ও নিজের পরিবার ফেলে ৩০টা দিন রাস্তায় রাস্তায় থাকা। তার সাথে এই ৩০ দিন ছিল তার এডিটর আর ভিডিওগ্রাফার। সে যেখানে নিজে ভিডিও করতে পারে নি সেখানে অন্যজন তার পেছন পেছনে সারাক্ষণ থেকে ভিডিও করেছে।
ওইদিনের ভিডিও ফুটেজ আবার সাথে সাথে তার এডিটরের কাছে চলে গেছে। যে আবার একটা ভ্যানে বসে দিনের ১২ ঘন্টা ভিডিও এডিট করে প্রতিদিন সকালে রায়ানের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড দিছে। মানে কি বলব, The grind was unreal!
এরকম কষ্ট খুব কম কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের করতে দেখা যায়। মজার ব্যাপার ছিল, মিস্টার বিস্টের রায়ানকে গ্রেট রিসেটের হুমকি দিয়ে পরে ৫০ হাজার ডোনেট করে তাকে গ্রেট রিসেটে ফেলে দেওয়া।
প্রত্যেকবার গ্রেট রিসেটে রায়ানের চেহারা দেখার মতো ছিল। মানুষ এত টাকা তার ফান্ডরেইজিং এ দিচ্ছে ঠিকই আবার তাকে মিস্টার বিস্টের কাছাকাছি যাওয়া থেকে এক ধাপ পিছিয়ে দিচ্ছিলো।
পুরো ৩০ দিনের সিরিজে এই গেইম ট্রিকসটা সবচেয়ে এংগেইজিং ছিল। এক দিনের পর পরেরদিন দেখতেই হত এই কারণে যে আজকে কি কেউ রায়ানকে গ্রেট রিসেটে ফেলে দিবে হাহাহা।
এই ৩০ দিনে Ryan Trahan কে যা করতে হয়েছেঃ
➡️ আমেরিকার ৬ স্টেট পাড়ি দিতে হয়েছে
➡️ ৮ বার দ্যা গ্রেট রিসেটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে
➡️ দুইবার একদম সরাসরি অফলাইনে গ্রেট রিসেটের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
➡️ দুই দুইবার ডাবল রিসেটের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
➡️ দুইবার একই সাথে ১ লাখ ডলারের ডোনেশন পেয়েছে।
➡️ ই-কমার্স কোম্পানি শপিফাইয়ের থেকে $ ৬৯, ৪২০ ডলার ডোনেশন পেয়েছে।
➡️ মিস্টার বিস্টেরই ডোনেশন প্রায় ১ লাখ ডলার!
এছাড়াও তার এই সিরিজ থেকে ইউটিউব এডসেন্সের আয় ও তার চ্যানেলে এই ৩০ দিনে যতজন সাবস্ক্রাইব করেছে তাদের বিপরীতে ১ পেনি করে প্রায় ১ লাখ ডলারের উপর সে নিজে ডোনেট করেছে। এই ৩০ দিনে রায়ান নতুন সাবস্ক্রাইবার পেয়েছে প্রায় দুই মিলিয়নের বেশি!
যারা চমৎকার এই সিরিজটা দেখতে চান Ryan Trahan এর চ্যানেলে গিয়ে এটা দেখা শুরু করতে পারেন। প্রায় ৩০ দিনের ৩০ টা ভিডিও, প্রায় ৮ ঘন্টার ডকুমেন্টারিই বলা চলে।
অথবা এই প্রথম দিন থেকে দেখা শুরু করুনঃ
৩০ তম দিনের ভিডিওতে মনে হচ্ছিল, রায়ানের এই জার্নির সাথে আমিও আছি। মিস্টার বিস্টের হাতে এক পেনি তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে রায়ানের ফিলিংসটা যেন আমিও অনুভব করতে পারছিলাম।
ততক্ষণে Feedings America এর ফান্ডরেইজিং পেইজে ডোনেশন উঠেছে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে প্রায় এত ১৩ মিলিয়ন+ ফ্রি মিল সার্ভ করা যাবে।
কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা চাইলে তাদের কন্টেন্ট ও রিচ দিয়ে কত বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে Ryan Trahan এর 30 Day One Penny series একটা উদাহারন।
এইজন্য ক্রিয়েটর ইকোনমি নিয়ে আমার আগ্রহ অনেক বেশি। দুঃখের বিষয়, আমাদের বাংলাদেশে ক্রিয়েটর ইকোনমি এখনো একটা সম্মানজনক অবস্থায় যেতে পারে নি। এটা অবশ্যই আমাদের রুচির একটা সমস্যাও। তবে আমি আশাবাদী, দেরিতে হলেও আমরা এটা কাটিয়ে উঠব।
কিভাবে? এই নিয়ে বিস্তারিত লেখা আসবে আমার ওয়েবসাইট নিশনামা ডটকমে। ক্রিয়েটর ইকোনমি নিয়ে আমার এই সিরিজ পড়তে থাকুন। চোখ রাখুন, সাথেই থাকুন।
Blog Feature Image Courtesy: Ryan Trahan – I Survived On $0.01 For 30 Days – Day 16