|

ক্রিয়েটর ইকোনমি বা প্যাশন ইকোনমি ১ পর্ব | নিশনামা ডাইজেস্ট ০৯

নিশনামা ডাইজেস্টের নবম ইস্যুতে স্বাগতম!

নিশনামা ডাইজেস্ট ০৯ ক্রিয়েটর ইকোনমি
Photo by Thomas Bjornstad on Unsplash

***            ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***

আজকের ইস্যুতে আমি আজ কথা বলব “ক্রিয়েটর ইকোনমি” নিয়ে। ক্রিয়েটর ইকোনমি বা প্যাশন ইকোনমি বাইরের দেশে একটি পরিচিত টার্ম হলেও বাংলাদেশে এটা খুব বেশি পরিচিত না। এক-দুই জন ক্রিয়েটর ছাড়া আর কাউকে আমি এই বিষয়ে কথা বলতে দেখছি না। আমি আমার এই নিশনামা সাইটে ক্রিয়েটর ইকোনমি নিয়ে কম কথা বললেও আমার মেইন টুইটার আর আমার ইংরেজি নিউজলেটারে নিয়মিত ক্রিয়েটর ইকোনমি নিয়ে কথা বলছি, লিখছিও।

সেসবে যে জিনিসগুলা নিয়ে আমি কথা বলেছি আজকের নিশনামা ডাইজেস্টে আমি সরাসরি সেইসব বিষয়গুলো ফিচার করব। আপনি যদি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে থাকেন বা কন্টেন্ট ক্রিয়েশন নিয়ে আগ্রহ থাকে তাহলে আজকে ডাইজেস্ট আপনার খুব ভালো লাগবে, আমি নিশ্চিত!

***            ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***

“ক্রিয়েটর ইকোনমি” কি?

creator economy
Photo by Sarah Brown on Unsplash

প্রথমেই আসা যাক ক্রিয়েটর ইকোনমি কি এই প্রসঙ্গে। ক্রিয়েটর ইকোনমিকে অনেকে প্যাশন ইকোনমিও বলে থাকে।

বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফর্বসের মতে – “The creator economy is a new economic model where creators can directly make money from their audience.”

সহজ বাংলায়, ক্রিয়েটর ইকোনমি হচ্ছে একটি নতুন ইকোনমিক মডেল, যেখানে একজন ক্রিয়েটর সরাসরি তার অডিয়েন্স (দর্শক বা গ্রাহক যাই বলেন) থেকে টাকা আয় করেন।

বাংলাদেশে এই জিনিসটা অনেকটা সরাসরি শুরু না হলেও বিদেশে এটা এখন অনেকটা নরমালাইজ বিষয়। সরাসরি অডিয়েন্স থেকে টাকা আয় করার বিষয়টা।

ক্রিয়েটর ইকোনমি এক ধরনের বিজনেস ক্লাস যা বর্তমানে ৫০ মিলিয়নের উপর ইন্ডিপেন্ডেন্ট কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, কিউরেটরস, কমিউনিটি বিল্ডার্স নিয়ে গঠিত যার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, ব্লগার, ভ্লগার, ভিডিওগ্রাফার সহ সেইসব সফটওয়্যার ও ফিনান্স টুল অন্তর্ভুক্ত যা ক্রিয়েটরদের মনেটাইজেশনে সাহায্য করে।

বর্তমানে পৃথিবীর ৫০ মিলিয়ন মানুষ নিজেদের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচয় দেয়। এটি বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত গড়ে উঠা স্মল বিজনেস ক্যাটাগরী। এক সার্ভেতে দেখা গেছে আমেরিকার বাচ্চারা একজন এস্ট্রোনাট হওয়ার চাইতে একজন ইউটিউবার হতে চায়।

ক্রিয়েটর ইকোনমি কত বড় বুঝাতে আমি কিছু ফ্যাক্টস বলছি-

  • বর্তমানে প্রায় ৩১ মিলিয়ন ইউটিউবার আছে যারা ফুল টাইম ইউটিউবে কন্টেন্ট বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।
  • ১ বিলিয়িন ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট নিজেদের এক্টিভ ইনফ্লুয়েন্সার দাবি করে, যা তাদের রিচ থেকে টাকা আয় করছে।
  • প্রায় ৩ মিলিয়ন টুইচ স্ট্রিমার আছে যারা টুইচ থেকে জীবিকা নির্বাহ করে।

স্রেফ ধারণা দেওয়ার জন্য বললাম। এখন বুঝতেই পারছেন ক্রিয়েটর ইকোনমি কত বড়। সিগনাল ফায়ারের এই রিপোর্টে বিস্তারিত লেখা আছে। যারা আগ্রহী তারা এই ডিটেইল্ড রিপোর্ট পড়তে পারেন।

আগেই বলেছি ক্রিয়েটর ইকোনমিকে অনেকে প্যাশন ইকোনমিও বলে থাকে। কারণ এখানে আপনি আপনার প্যাশনটাকে কাজে লাগিয়ে নিজের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। 

উদাহারণ স্বরুপ বলি যে, আপনি রোবটিক্স নিয়ে পড়তে ও লিখতে পছন্দ করেন। আপনি যা পড়েন বা শিখেন তা নিয়ে প্রতিদিন আপনার ব্লগে লেখালেখি করেন (ধরেন এই আমার মতো)। এখন আপনার ব্লগ আস্তে আস্তে অনেকে পড়া শুরু করলো। মনে করুন ২০০-৩০০ মানুষ আপনার ব্লগে রোবটিক্স নিয়ে লেখা পড়তে আসে। এখন অনেকে কমেন্ট করে যে রোবটিক্স নিয়ে আপনার কাছ থেকে শিখতে চায়, আপনি কি শেখাবেন। এর জন্য সে আপনাকে কোর্স ফি দিতেও ইচ্ছুক। এখন আপনি চাইলেই ঘরে বসে সপ্তাহে তিন দিন কোর্স চালনা করতে পারবেন জুম এপের সাথে ভিডিওতে। কেউ আপনাকে আটকাতে পারবে না, ইন্টারনেট আপনার জন্য সবকিছু মুক্ত করে দিয়েছে। এই কোর্সের জন্য আপনি জনপ্রতি ৫০০০ থেকে যত ইচ্ছা চার্জ করতে পারবেন আপনার এই বিষয়ে অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে।

সহজ আরেকটা উদাহারণ দেই। আপনি ইউটিউবে কুকিং ভিডিও দেন। আপনার লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার। আপনি ইউটিউব থেকে মাসে এডসেন্স এড থেকেই হাজার- লাখ টাকা আয় করেন। এর মাঝে অনেকে আপনার কাছে থেকে শিখতে চান। আপনি একটা কুকিং কোর্স শুরু করলেন দশ হাজার টাকার এক মাসের। যারা শিখতে ইচ্ছুক তারা এসে আপনার কাছ থেকে শিখলো।

এই দুই উদাহারণেই আপনি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যে নিজের প্যাশন কাজে লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন ও অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের মাধ্যমে এই যে ইকোনমিটা গড়ে উঠছে বলেই এটাকে ক্রিয়েটর ইকোনমি আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।

ইন্টারনেট আসার আগে সবকিছু সেন্ট্রালাইজড মিডিয়া। যেমন – টিভি, রেডিও, পত্রিকা। আপনি চাইলেই কিন্তু টিভিতে যেতে পারতেন না, পত্রিকায় লিখতে পারতেন না। রেডিওতে শো করতে পারতেন না। কিন্তু ইন্টারনেট আসার পর সবকিছু ডিসেন্ট্রালাইজড মিডিয়ার উত্থান ঘটেছে। আপনি চাইলে ইউটিউবে ভিডিও রেকর্ড করে আপলোড করতে পারেন। পডকাস্টে নিজের শো করতে পারেন। নিজের সাইটে লিখতে পারেন। চাইলেই হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌছাতে পারেন ইন্টারনেট দিয়ে। এই ইন্টারনেট ক্রিয়েটর ইকোনমি তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। আগামিতেও রাখবে।

কিছুটা হলেও বুঝাতে পারছি কি? এই হচ্ছে ক্রিয়েটর ইকোনমি বা প্যাশন ইকোনমি!

***            ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***

ক্রিয়েটর ইকোনমি আমার অনেক পছন্দের একটা বিষয়। তাই ক্রিয়েটর ইকোনমি নিয়ে আমার ইংরেজি নিউজলেটার “ইউকলি নিশ ইজ হেয়ার” এ আমি প্রথম ইস্যু থেকেই নিয়মিত লিখে আসছি (আপনি ইন্টারেস্টেড হলে নিজের ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন, আমি প্রতি সোমবার একটা ইমেইল পাঠাই)।

সেইসব ইমেইলে যে বিষয়গুলো ফিচার করেছি আমি সেগুলা এই পোস্টে তুলে ধরতে চাই। এতে ক্রিয়েটর ইকোনমি নিয়ে আপনি একটা মোটামুটি ধারণা পেয়ে যাবেন।

সাত মাসে ১.৪ মিলিয়ন ডলার, বয়স মাত্র ১৮!

ক্রিয়েটর ইকোনমি নিয়ে রয়টার্সের এই প্রতিবেদনটা পড়তে পারেন। রয়টার্সের এই প্রতিবেদনে বেশ কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কথা তুলে ধরেছে। কিভাবে বড় বড় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের পেছনে লাখ লাখ ডলার ডালছে শুধু তাদের সাইটে/এপে ধরে রাখার জন্য তার একটা ধারণা পাবেন।

আমি এই প্রতিবেদন থেকে একটা ছোট্ট উদাহারণ তুলে ধরছি। কেটি ফিনি একজন ১৮ বছর বয়সের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যে কিনা মাত্র এক সপ্তাহ স্ন্যাপচ্যাটে স্কিট বা আনবক্সিং ভিডিও আপলোড করে ২ লাখ ২৯ ডলার আয় করেছে। সাত মাসে সে ১.৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে যা তার কলেজ টিউশন ফি পরিশোধ করার জন্য যথেষ্ট!

Katie Feeney, an 18-year-old social media personality
ফটো – রয়টার্স

টিকটকে পাঁচ মিলিয়ন ফলোয়ার পাওয়ার পর মেয়েটি স্ন্যাপচ্যাটে জয়েন করে কারণ তখন স্ন্যাপচ্যাট প্রতিদিন প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার করে দিচ্ছিলো কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের সেখানে ভিডিও আপলোড দেওয়ার জন্য। বর্তমানে তাকে ইউটিউব হায়ার করেছে আলাদা করে তাদের নতুন ফিচার ইউটিউব শর্টস ব্যবহার করার জন্য। ইউটিউব শর্টস হচ্ছে ইউটিউবের টিকটক কম্পিটিটর যেখানে শর্ট ভিডিও আপলোড করা যাবে।

এরকম আরো কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের কথা লেখা হয়েছে প্রতিবেদনে যাদের পেছনে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলো লাখ লাখ ডলার ঢালছে কম্পিটিশনের মাঝে বাজার ধরে রাখতে।
 

***            ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***

ইউটিবার লোগান পল ভার্সেস বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েথার

logan vs floyd boxing match
Photo – Wikipedia

একজন ইউটিবার একজন প্রফেশনাল বক্সারের সাথে বক্সিং ম্যাচে রিঙয়ে নামছে আর লাখ লাখ দর্শক সেটা টাকা দিয়ে সাবক্রিপশন নিয়ে দেখছে কিছু বছর আগেও হয়তো সেটা বিশ্বাস করা যেত না। কিন্তু ক্রিয়েটর ইকোনমি সেইটাই করে দেখিয়েছে।

জুনের ৬ তারিখ ক্রিয়েটর ইকোনমির এই সবচেয়ে বড় ইভেন্ট সংগঠিত হয়। যেখানে এক মিলিয়ন পে-পার-ভিউ সেল হয়, অর্থ্যাৎ ১ মিলিয়ন মানুষ এই বক্সিং ম্যাচ দেখতে টাকা দিয়ে সাবস্ক্রাইব করেছে। মেওয়েথার এই ইভেন্ট এর স্পন্সরশিপ থেকে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার আর লোগান পল এর থেকে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

কিন্তু এই ইভেন্ট এত হাইপ পাওয়ার কারণ কি? একটাই উত্তর স্টোরি টেলিং! 

আর এই জিনিসটা ট্র্যাডিশনাল মিডিয়া থেকে কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা ভালো পারে। এই ইভেন্ট এর আগ থেকে ফ্লয়েড ও লোগান যেভাবে পাবলিকের এটেনশন গ্র্যাব করে স্টোরি টেলিং করছিলো বিভিন্ন ঘটনা, টুইট, ইউটিউব ভ্লগের মাধ্যমে সেটা ছিল দেখার মতো!

আসলে – Attention is the NEW CURRENCY!

সেটাই এই ইভেন্ট প্রমাণ করেছে। লোগান পল আর ইউকের ইউটিবার কে.এস.আই এর প্রথম বক্সিং ম্যাচটাও স্টোরি টেলিং এর সেরা উদাহারণ ছিল।

লোগান পল নিজের ইউটিউব ভ্লগ, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, নিজের পডকাস্ট ইত্যাদি চ্যানেল ব্যবহার করে বক্সিং ম্যাচের আগ থেকে শেষ পর্যন্ত চমৎকারভাবে স্টোরি টেলিং করে গেছে যা মিলিয়ন মিলিয়ন দর্শককে আকৃষ্ট করেছে, তাদের এটেনশন গ্র্যাব করেছে। ইউটিবারদের চেয়ে ভালো এটেনশন তৈরি ও সেটাকে মনেটাইজেশন করা মনে হয় আর কেউ ভালো পারে না!
 

***            ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***

“কল হার ড্যাডি” পডকাস্ট আর স্পটিফাই এর ৬০ মিলিয়ন ডলারের ডিল

স্পটিফাইকে তো আমরা সব চিনি। স্পটিফাই হচ্ছে দুনিয়ার সব বড় মিউজিক স্ট্রিমিং জায়ান্ট। সম্প্রতি স্পটিফাই ৬০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে জনপ্রিয় পডকাস্ট “কল হার ড্যাডি” কিনে নিয়েছে।

call her daddy podcast
Photo – Internet

এই স্পডকাস্ট জিনিসটা কি রে ভাই?!

পডকাস্ট হচ্ছে অডিও ফর্মে শো, যা ইন্টারনেটে অডিও ফাইল আকারে থাকে। এটি সিরিজ হিসেবে থাকতে পারে আবার পর্ব আকারেও থাকতে পারে। যে কেউ ডাউনলোড করে শো গুলা শুনতে পারবে। কোন ভিডিও যেমন ভিডিও প্লেয়ার দিয়ে দেখা যায় পডকাস্টের শো গুলাও পডকাস্ট প্লেয়ার দিয়ে শুনা যায়। ২০০০ সালের পর থেকে পডকাস্ট জনপ্রিয় হতে থাকে। লাখ লাখ মানুষ বর্তমানে পডকাস্ট শুনে থাকে। ধরে নিন, পডকাস্ট হচ্ছে ইউটিউব চ্যানেলের মতো। একটা ইউটিউব চ্যানেলে লাখ লাখ সাবস্ক্রাইব করতে পারে তেমনি পডকাস্টেও সাবস্ক্রাইব করা যায়। নির্দিষ্ট ফিডে পডকাস্ট শুনতে পাওয়া যায় আর পডকাস্ট সে ফিডে আপডেট করা যায়।

বর্তমানে পডকাস্ট এর গ্লোবাল মার্কেটের সাইজ হচ্ছে ৯.২৮ বিলিয়ন ডলার ২০১৯ সালে আর ২০২০ সালে এটা ১১.০৭ বিলিয়নে পৌছাবে। বুঝতেই পারছেন, পডকাস্টের বাজারদর।

আমি জানি আপনারা অবাক হচ্ছেন একটা পডকাস্টের জন্য এত টাকা কেন? কারণ হচ্ছে পডকাস্ট গুলোর অডিয়েন্স

“কল হার ড্যাডি” পডকাস্ট স্পটিফাইয়ে টপ ফাইভে আছে আর অন্যান্য সাইটে ১৫ এর মধ্যে র‍্যাংক করে। বুঝতেই পারছেন, মাসে মিলিয়ন মিলিয়ন অডিয়েন্স নিয়মিত এই শো শুনে থাকে!

এই অডিয়েন্স এর জন্যই স্পটিফাই ৬০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে, যেখানে এই পডকাস্ট এক্সক্লুসিভলি শুধুমাত্র স্পটিফাইয়ে শোনা যাবে।

স্পটিফাইয়ের এই রকম ডিল নতুন না। নিজেদের সাবস্ক্রাইবার বেইজ বাড়াতে এর আগে তারা জো রোগান এর পডকাস্ট ১০০ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয় যা এক্সক্লুসিভলি স্পটিফাইয়ে প্রচারিত হচ্ছে। ওই পডকাস্টও নিয়মিত মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ শুনে থাকে।

সম্প্রতি, আমাজান ৮০ মিলিয়ন ডলারে “স্মার্টলেস” নামে একটি পডকাস্ট এক্সক্লুসিভলি কিনে নিয়েছে!

অডিও ফর্মেও যে ক্রিয়েটররা অনেক অনেক টাকা ইনকাম করছে তার একটা চমৎকার উদাহারণ এই স্পটিফাই ডিলগুলো। বুঝতে পারছেন, ক্রিয়েটর ইকোনমির শক্তি?

***            ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***

গামরোড- ক্রিয়েটর সেলিং প্ল্যাটফর্ম

গামরোড হচ্ছে একটি ক্রিয়েটর প্লাটফর্ম, যেখানে আপনি যেকোন কিছু খুব সহজেই বিক্রি করতে পারবেন। বই থেকে শুরু করে কোর্স – যে কোন কিছু!

এখন পর্যন্ত ৯০ হাজারের বেশি ক্রিয়েটর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আয় করেছে। নিচের ইনফোগ্রাফিক্সে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে- কোন ক্যাটাগরীতে ক্রিয়েটররা কি বিক্রি করছে আর টাকা আয় করছে।

প্যাট্রিওন হচ্ছে এমন আরেকটি ক্রিয়েটর সেলিং সাইট। তবে এটি অনেকটা মেম্বারশিপ ক্লাবের মতো। আপনি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট ক্রিয়েটরকে সাবস্ক্রাইব করে সাপোর্ট করতে পারবেন। 


বর্তমানে প্রায় ৩ মিলিয়ন প্যাট্রন এই সাইটের মাধ্যমে নানান ক্যাটাগরীর ক্রিয়েটরদের সাপোর্ট করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ক্রিয়েটরদের ১ বিলিয়ন ডলার পে করেছে কোম্পানিটি! বুঝতেই পারছেন, এই সাইটটি ব্যবহার করে কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা অনেক টাকা আয় করছে।

***            ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***

কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ধরে রাখতে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম কি কি সুবিধা দিচ্ছে?

কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের নিজের প্ল্যাটফর্মে ধরে রাখতে টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক কোম্পানিগুলো নানা রকম মনেটাইজেশন টুলস আর সুবিধা দিচ্ছে। সবাইইই এখন বিলিয়ন ডলারের ক্রিয়েটর ইকোনমির একটা অংশ পেতে চাইছে। এখন আমরা দেখবে কোন প্ল্যাটফর্ম কি কি সুবিধা দিচ্ছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদেরকে। এটা আপনাদের কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ভ্যালু ও প্রয়োজনীয়তা বুঝতে সাহায্য করবে।   

ইন্সটাগ্রাম এক্সক্লুসিভ স্টোরিজ নামে একটা ফিচার আনতে যাচ্ছে যেখানে কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা প্রিমিয়াম সাবস্ক্রাইবারদের জন্য স্টোরিজ পোস্ট করতে পারবে, যা টাকা দিয়ে দেখতে পারবে। এছাড়া কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ধরে রাখতে আগামীতে আরো নানান রকম মনেটাইজেশন টুলস আনতে যাচ্ছে ইন্সটাগ্রাম।

ফেসবুক “বুলেটিন” নামে নতুন একটি সুবিধা এনেছে যেখানে নিউজলেটার লেখকরা নিজেদের নিউজলেটার প্রকাশ করে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রাইবার থেকে টাকা আয় করতে পারবে। এটি সম্পূর্ন “সাবস্টেক” নামক নিউজলেটার কোম্পানির সাথে কম্পিটিশনে ফেসবুক বুলেটিন বাজারে এনেছে। সবস্টেকে যে কেউ নিউজলেটার ওপেন করে লেখালেখি করতে পারে ফ্রি, সাথে প্রিমিয়াম নিউজলেটার অফার করে সাবস্ক্রাইবারদের থেকে টাকা আয় করা যায়।

◘ সম্প্রতি ফেসবুক নিজের প্ল্যাটফর্মে ক্রিয়েটরদের আকৃষ্ট করতে ১ বিলিয়ন ডলারের ক্রিয়েটর ফান্ড ঘোষণা করেছে। ক্রিয়েটরদের নিজের প্ল্যাটফর্মে ধরে রাখতে নানা রকম মনেটাইজেশন টুলসও তাঁর দিচ্ছে। যেমন ফেসবুক পেইজে ক্রিয়েটরদের সাপোর্ট করারা জন্য সেন্ড স্টার অপশন এনেছে যার মাধ্যমে যে কেউ তাঁর পছন্দের ক্রিয়েটরকে মাসিক একটা এমাউন্টের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব করে সাপোর্ট করে যেতে পারবে। এছাড়া প্রিমিয়াম সাবস্ক্রাইব করা যাবে এমন ফেসবুক গ্রুপ নিয়েও কাজ করছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।

◘ ক্রিয়েটর ফান্ড নতুন কিছু না। এর আগে টিকটক ২০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রিয়েটর ফান্ড ঘোষণা করেছিলো, যার নাধ্যমে এখনো ক্রিয়েটররা মাসে মাসে আয় করছে। 

◘ স্ন্যাপচ্যাট নিজেদের একটি টিকটক কম্পিটিটর “স্পটলাইট” এ কন্টেন্ট ক্রিইয়েটরদের অংশগ্রহন বাড়াতে সবচেয়ে বড় ক্রিয়েটর ফান্ড ঘোষণা করেছিলো, যেখানে একজন ক্রিয়েটর প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারত। পোষ্টের শুরুতে যে কেটি ফিনির কথা বলেছি সে এই ক্রিয়েটর ফান্ড থেকে ১.৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে সাত মাসে।
এখনো ক্রিয়েটরদের ভালো এমাউন্ট পে করে যাচ্ছে স্ন্যাপচ্যাট।

◘ ইউটিউবও পেছনে নাই। এই কিছুদিন আগে তারা টিকটকের কম্পিটিটর হিসেবে ইউটিউব শর্ট নামে একটা ফিচার এনেছে যেখানে শর্ট ভিডিও আপলোড করা যায়। এই ফিচার যাতে ক্রিয়েটররা বেশি বেশি করে ব্যবহার করে সেজন্য তারা ১০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রিয়েটর ফান্ড এনেছে, যা ২০২১-২০২২ এ শর্ট ইউজারদের মাঝে ডিস্ট্রিবিউট করা হবে।

◘ টুইটারও বসে নেই। দীর্ঘ সময় ক্রিয়েটরদের দাম না দেওয়ার পর তারা এই ২০২১ সালে বেশ কিছু মনেটাইজেশন ফিচার এনেছে। যেমন টিপস ফিচার, যার মাধ্যমে ফলোয়াররা যে কোন টুইটার ইউজারকে টিপস প্রদান করতে পারবে। এই টিপস ফিচার তারা তাদের টুইটার স্পেসেও এনেছে। এছাড়া টিকেটেড টুইটার স্পেস ইভেন্টও আনতে যাচ্ছে। “সুপার ফলো” নামে আরেকটা সাবস্ক্রিপশন ফিচার নিয়ে তারা কাজ করছে, যেখানে টুইটার ইউজার তাঁর নরমাল ফিডের পাশাপাশি একটা প্রিমিয়াম ফিড তৈরি করতে পারবে তাঁর নিজের এক্সক্লুসিভ কন্টেন্ট শেয়ার করতে পারবে। সেই এক্সক্লুসিভ কন্টেন্ট পেতে হলে সাবস্ক্রাইবারদের টাকা দিয়ে সাবস্ক্রাইব করতে হবে। অনেকটা অনলি ফ্যানস সাইটকে কম্পিটিশনে ফেলতে যাচ্ছে তারা।

***            ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***        ***

আজকের এই পোস্টে আমি অনেকটা সংক্ষিপ্ত করে “ক্রিয়েটর ইকোনমি” নিয়ে লিখেছি। আসলে এর ব্যাপ্তি অনেক। হাজার ব্লগ লিখেও যা শেষ হবে না। তবে আমি ঠিক করেছি নিয়মিত পর্ব আকারে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও ক্রিয়েটর ইকোনমি নিয়ে লিখব। এই পর্বটা আপাতত ক্রিয়েটর ইকোনমির পরিচিতি হিসেবে থাকলো। আগামী পর্ব গুলোতে আমি ক্রিয়েটর ইকোনমি নিয়ে আরো লিখব, বাংলাদেশের ক্রিয়েটর ইকোনমি, আমাদের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আর প্ল্যাটফর্ম গুলোও নিয়ে লিখব।

যারা আমার আগামী পর্ব গুলো পেতে চান তারা নিশনামার অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন অথবা আমার ফেসবুক পেইজে লাইক দিতে পারেন।

এতক্ষণ নিশনামা ডাইজেস্ট ইস্যু ০৯ পড়ার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তী ইস্যু পাবেন আগামী রবিবার রাতে। 

আগের ইস্যু পড়ুন এখানেঃ

আমাকে ফলো করতে পারেনঃ

পড়ুন নিশাত শাহরিয়ারের অন্যান্য লেখাঃ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.